বাংলাদেশে ডিভোর্স বেড়ে যাওয়ার কারন পর্ব-২ || বিবাহ বিচ্ছেদ বাড়ছে কেন এত? ।। বিয়ের আগে কি করলে ডিভোর্স হবে না পর্ব-২ ।। দিনে ৩৯ তালাক
যে কারণগুলোর কারনে ডিভোর্স বা বিবাহ বিচ্ছেদ বাড়ছে সেটি নিয়ে আজকে আলোচনা করবো পর্ব-২
![]() |
চিত্র: জনপ্রিয় কাপলদের বিচ্ছেদ |
আসসালামুআলাইকুম, হ্যালো বন্ধুরা ডিভোর্স সিরিজ নিয়ে আমার করা দ্বিতীয় পর্বে আপনাদের সবাইকে জানাই স্বাগতম । এর আগে আমি আর ও একটা ( পর্ব-১ ) প্রকাশ করেছিলাম ডিভোর্স নিয়ে । কিভাবে ডিভোর্স বাংলাদেশে কমানো যায় ? আমি পাঁচটা কারণ আপনাদের সামনে আলোচনা করেছিলাম সে পর্বটিতে ।
আজকের এই পর্বে আরো পাঁচটা কারণ আলোচনা করবো । আপনারা যদি কেউ আগের ভিডিওটি দেখে না থাকেন তাহলে আপনারা অবশ্যই আগের পর্ব দেখে নেবেন । আগের পর্বের লিঙ্ক: পর্ব-১
আজকে আমরা ওই পর্বের পরের অংশ থেকে আলোচনা করবো মানে ১-৫ টা কারণ আলোচনা করা শেষ আগের পর্বে(পর্ব-১) ।
আজকে ৬ নাম্বার কারণ, 7 নাম্বার কারণ, ৮ নাম্বারের কারণ, ৯ এবং ১০ নাম্বার কারণ আলোচনা করব ।
আপনারা জানেন যে, বাংলাদেশে শুধু ঢাকার কথা যদি বলি, দিনে ৩৯ টা তালাক হচ্ছে । এটা নিয়ে আসলে কারও কোন মাথা ব্যাথা দেখছি না । কিন্তু এ নিয়ে আসলে আমি অনেক চিন্তা করছি এবং অনেক রিসার্চ এর পর আপনাদের সামনে আমি এটা নিয়ে লিখা নিয়ে আসতে চলেছি ।
এবং এই কারণগুলো আপনারা শুধু নিজে জানলে হবে না সাথে আপনাদের বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজন সবাইকে জানাতে হবে । কারণ বাংলাদেশে যে হারে ডিভোর্স বেড়ে যাচ্ছে অর্থাৎ যে হারে আপনাদের পরিবার বিচ্ছেদ হচ্ছে এরকম যদি হতে থাকে তাহলে কিন্তু আমেরিকার মত হতে বেশি সময় লাগবে না । আমরা কেউ চাই না আমাদের দেশটা আমেরিকার মত কালচারে পরিণত হোক।
আর এই জন্যই আমার ওই চিন্তা থেকেই এই পর্ব তৈরী করা এবং আমি চাই যে, আপনাদের পরিবারগুলো ইউনাইটেড থাকুক । আর আপনারা জেনে থাকবেন যে, বাংলাদেশের রিসেন্টলি কয়েকটি ডিভোর্স হয়েছে । যেগুলো ডিভোর্সের কথা আমরা কখনও কল্পনাও করিনি । যেমন: তাহসান-মিথিলার কথা, তারপর হচ্ছে মাহফুজুর রহমান এবং ইভা রহমানের কথা এবং ইন্টারন্যাশনালে যদি বলি বিল গেটস এবং তার ওয়াইফের ডিভোর্স হয়ে গেল ।
তারমানে আমরা প্রতিনিয়ত আশেপাশে অনেক ডিভোর্স দেখছি কিন্তু আমি যেটা বললাম সেটা হচ্ছে কিউট কাপল ছিল তারা এবং তাদের মধ্যে ডিভোর্সের কথা কেউ কখনও চিন্তা করেনি । তাহলে আমি আর কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনায় আসি ।
তাহলে চলুন দেখে নেই কারনগুলো:
৬ নম্বর. কারণ হিসেবে যেটা আইডিন্টিফাই করেছি সেটা হচ্ছে ঘরে আসলে এবং ঘর থেকে বের হলে তৎক্ষনাৎ নেগেটিভ কথা বলা(Home in+out mental pressure)
ধরুন, আপনার হাজব্যান্ড ঘরে আসলো এবং আসার সাথে সাথেই আপনি বললেন চাল নেই, ডাল নেই, অমুক নেই-তমুক নেই । আপনার হাজব্যান্ড ভুল করতে পারে কিন্তু আসার সাথে সাথেই তাকে এই ধরনের কথাগুলো বললে আপনার হাজব্যান্ড টোটালি রেগে যাবে । এটা কিন্তু মানসিক একটা প্রেসার এবং এর ফলে আপনার হাজবেন্ডের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাবে এবং যেটা কিনা ঘরে ঝগড়া সৃষ্টি করবে ।
আবার ঘর থেকে বের হওয়ার সময় বললেন, এটা নিয়ে এসো, সেটা নিয়ে এসো । বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় তখনও কিন্তু তার মাথায় অনেক মানসিক চাপ থাকবে । সম্পর্ক মধুর না হলে সেটা ডিভোর্স এর দিকে নিয়ে যেতে পারে ভবিষ্যতে ।
৭ নম্বর. যে কারণটি আইডেন্টিফাই করেছি, সেটা হচ্ছে - বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় একজন আরেকজনকে ফ্রেন্ড মনে করতে না পারা(Thinking Error-Friend)
ফ্রেন্ড মনে না করাটাই হচ্ছে বড় ধরনের ব্রেকআপ এর পিছনে দায়ী । আমরা আসলে হাসবেন্ড-ওয়াইফ সম্পর্কটা অন্য লেভেলের চিন্তা করি । অন্য লেভেলে চিন্তা করলে এক্সপেকটেশন বাড়বে । আসলে অন্য লেভেলে চিন্তা করার কোনো সুযোগ নেই । একটা জিনিস চিন্তা করুন, আপনার ছোটবেলায় যারা আপনার বন্ধু ছিলো সবাই কিন্তু আপনার মন মত ছিল না ।
আপনি যা চাইছেন সবাই কিন্তু ১০০% আপনার মন মতো নাও হতে পারে । আপনি কিভাবে সব নিজের মন মতো চিন্তা করছেন।
৮ নাম্বার. কারণ হিসেবে আমরা যেটি স্থান দিয়েছি সেটি হচ্ছে নাক ডাকা(Snoring)
আপনাকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, মানুষের সব থেকে প্রিয় জিনিস কোনটি? কেউ বলবেন, আমার সব থেকে প্রিয় জিনিস সিনেমা দেখা, আমার সব থেকে প্রিয় জিনিস ভ্রমণ করা । কিন্তু একটা জিনিস কি ভেবে দেখেছেন, সব থেকে প্রিয় জিনিস কি? আসলে সব থেকে প্রিয় জিনিস হচ্ছে ঘুম ।
আপনার আমার যদি একদিন ঘুম না হয় কোন কারণে তাহলে আমাদের মাথা ঠিক থাকেনা এবং আমাদের মেজাজ কিন্তু খুব চড়া হয়ে থাকে । তার পরে থেকে সম্পর্ক নষ্ট আর পরে ডিভোর্সের দিকে যেতে পারে । বিয়ের আগে যদি আপনারা জেনে নেন যদি যে, নাক ডাকার প্রবলেম আছে কিনা আপনার হাসবেন্ড ও ওয়াইফ এর তবে সম্পর্ক মধুর হবে সেটি ।
9 নাম্বার. কারণ হিসেবে আমরা যেটা স্থান দিয়েছি বিয়ের পর কেমন পরিবারে আপনারা থাকবেন(After marriage family situation)
সেটা অবশ্যই আপনারা বিয়ে করার আগেই জিজ্ঞেস করে নিবেন আপনারা যৌথ পরিবারে থাকবেন নাকি একক পরিবারে থাকবে । সে কোন পরিবারে থাকবে অবশ্যই আপনার হবু স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করে নেবেন । সে যে পরিবারে থাকতে চায় আর আপনি কি চাচ্ছেন, আপনার সাথে আপনার ওয়াইফের অবশ্যই মিল থাকতে হবে । যেটা কিনা অবশ্য আপনাদের বিয়ের আগে ঠিক করতে হবে । অনেক সময় দেখা যায় যে বিয়ের আগে এই বিষয়টা কথা না বলার কারনে বিয়ের পর স্ত্রীর আবদার থাকে একক পরিবারে থাকার জন্য । তখনও কথা কাটাকাটির জেরে অনেকের ডিভোর্স হয়ে যায় পরবর্তীতে ।
১০ নম্বর. কারণ হিসেবে যেটিকে স্থান দিয়েছি সেটি হচ্ছে বাছাইয়ের ভুল(Selection error)
কারণ মানুষ মানুষকে পছন্দ করে মানুষের চেহারা দেখে, মানুষের চোখ দেখে, মানুষের হাসি দেখে, মানুষের কথায় মুগ্ধ হয়ে এবং মানুষের চরিত্র দেখে । মানুষের চরিত্র কিন্তু আজীবন থাকবে কিন্তু মানুষের রূপ সৌন্দর্য কিন্তু সারাজীবন থাকবে না । মানুষের চোখের সৌন্দর্য, মানুষের কন্ঠ, মানুষের হাসির সৌন্দর্য একদিন কিন্তু শেষ হয়ে যাবে । তাহলে অবশ্যই আপনারা যদি চরিত্র অর্থাৎ গুণ দেখে একজন আরেকজনকে পছন্দ করেন তাহলে সেই সম্পর্কটা মজবুত হবে ।
যখন একজন আরেকজনকে বিয়ে করলো রূপ দেখে , কোন এক ভবিষ্যতে যদি তার রূপ নষ্ট হয়ে যায় তবে তাকে আর তখন ভালো লাগবে না । যেটা ডিভোর্সের দিকে গেলেও অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না ।
আরো বিস্তারিত বুঝতে ভিডিও টি দেখতে পারেন লিঙ্ক
নেক্সট আরো দুইটা পর্ব করার আমার ইচ্ছা আছে এই বিষয়টা নিয়ে । আপনারা দোয়া করবেন যেন আমি বাংলাদেশের সংস্কৃতি মোটামুটি ঠিক রাখার জন্য চেষ্টা করে যেতে পারি এবং এতেই লাভ গুরুর সফলতা ।
এই ব্লগে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হবে । সামাজিক সমস্যাগুলোর কারণ কি, সামাজিক সমস্যা গুলোর জন্য দায়ী কে এবং সামাজিক সমস্যাগুলোর সমাধানে কি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে…