বিবাহ বিচ্ছেদ বাড়ছে কেন এত? || বাংলাদেশে ডিভোর্স বেড়ে যাওয়ার কারন পর্ব-১ ।। বিয়ের আগে কি করলে ডিভোর্স হবে না ।। দিনে ৩৯ তালাক
যে কারণগুলোর কারনে ডিভোর্স বা বিবাহ বিচ্ছেদ বাড়ছে সেটি নিয়ে আজকে আলোচনা করবো

চিত্র: জনপ্রিয় কাপলদের বিচ্ছেদ

আপনাদের ছেলেমেয়েদের বিয়ে দেওয়ার আগে এই কারণগুলো অবশ্যই ভালোভাবে সতর্কতার সাথে দেখবেন
ইদানিং একটা বিষয় আমাকে খুবই ভাবিয়ে তুলেছে। দিনে 39 তালাক হচ্ছে এটা নিয়ে কারো তেমন কোন মাথা ব্যাথা নেই । হিসেবেই যদি ৩৯ থাকে তবে হিসেব ছাড়া না জানি কতই তালাক হচ্ছে!
ডিভোর্স যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার কিন্তু করোনাকালীন সময় ডিভোর্স বেড়ে গিয়েছিলো যে হারে, সেটার স্রোত এখনও চলমান । ডিভোর্সের কারণে সন্তানদের কত বড় মানসিক চাপ নিতে হচ্ছে সেটা আসলেই বেদনাদায়ক।
সেটা নিয়ে ভাবতে ভাবতে অনেকগুলো কারণ আমি খুঁজে বের করেছি দীর্ঘ গবেষণার মাধ্যমে।
এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে আমাদের দেশের সংস্কৃতি পশ্চিমা সংস্কৃতি তে ভরে যাবে। আর আমরা কেউ চাই না আমাদের দেশের সংস্কৃতি পশ্চিমাদের মত হয়ে যাক।
ডিভোর্স সেটা নতুন বিষয় নয় কিন্তু আমি এই ডিভোর্স বিষয়টা নিয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব সহকারে মনোযোগ দিয়েছি এই কারণে ,যে হারে বেড়ে যাচ্ছে ডিভোর্স সে হারে বাড়তে থাকলে একটা সময়ে বাংলাদেশে পরিবার বলতে আর কোন কথা থাকবে না ।
আমি চেষ্টা করে যাবো কিভাবে ডিভোর্সের হার কমানো যায় কিন্তু আমি কখনোই কিন্তু ডিভোর্স শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসতে পারবো না।
বাংলাদেশে একটা সময় ১০ টার ও কম ডিভোর্স হতো কিন্তু এখন ৩৯ ।বিশ্বের সবচেয়ে ধনী বিল গেটস ! একটা সময়
তাকে হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে সেরা ধনী ধরা হতো,
এখন সে বিল গেটসের ডিভোর্স হয়ে গেল কয়েক দিন আগে
যেটা আপনারা শুনেছেন ।
তারমানে আমরা কি বুঝতে পারলাম ?এইখানে যত বেশি টাকা
থাকুক না কেন আসলে টাকাটার সাথে ডিভোর্স
এর তেমন ধরনের সম্পর্ক নেই ।
তারপরে আমরা যদি চিন্তা করি কিউট কাপল যেমন আমি যদি
বলি তাহসান-মিথিলার কথা তাদেরও কিন্তু
ডিভোর্স হয়েছে । আমরা যে জিনিসটা কখনও কল্পনা করিনি
যে জিনিসটা হতে পারবে ।
তারপরে আমরা রিসেন্টলি কিছুদিন আগে মাহফুজুর রহমান
এবং ইভা রহমান তাদের ডিভোর্স হয়ে গেল ।
তারমানে আমরা বলতে পারি যে এই সমস্ত সুন্দর সুন্দর
কাপলদের যা আমরা কখনোই চিন্তা করিনি যে যাদের
মধ্যে একটা ভাঙন হবে, তাদের মধ্যে ভাঙন সৃষ্টি হয়ে গেল ।
তাহলে চলুন দেখে নেই কারনগুলো:
এক নাম্বার. কারণ হচ্ছে বয়স ডিফারেন্স খুব বেশি হওয়া
বয়সের পার্থক্য থাকবেই তবে সেটা যাতে খুব বেশি যাতে না হয়
সর্বোচ্চ যদি রাখতে হয় স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যে সর্বোচ্চ পার্থক্য
অনেক ক্ষেত্রে অমিল দেখা যাবে তখন কিন্তু পরিবারে অশান্তি
বিয়ের পর মতের মিল করে নিব কিন্তু বিশ্বাস করুন মতের
দুই নাম্বার. কারণ সেটি হচ্ছে ফ্যামিলি স্ট্যাটাস ম্যাচ না হলে
ফ্যামিলি স্ট্যাটাস জিনিসটা কি?
ধরুন আপনি আপনার ছেলেকে বিয়ে দিতে যাচ্ছেন সে ক্ষেত্রে আপনি একটা সুন্দরী মেয়ে চয়েস করতে যাচ্ছেন ।এখন অনেক জায়গায় খোঁজাখুঁজির পর কোন সুন্দর মেয়ে পাওয়া যাচ্ছেনা, ধরুন একটা পেলেন কিন্তু সে মেয়ে অনেক গরিব । এখন তাকে আপনি আপনার ছেলের জন্য নির্বাচিত করলেন কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যাবে ওই মেয়েটার চেহারা আর আগের মতো নেই, কোন কারণে নষ্ট হয়ে গেছে পরবর্তীতে কি হবে জানেন?
পরবর্তীতে ওই মেয়ের ওই সংসারে থাকাটা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাবে কারণ ওই মেয়েকে আনাই হয়েছে শুধুমাত্র একটা কারণে সেটি হচ্ছে চেহারা দেখে রুপ দেখে । পরবর্তীতে কোনো কারণে যদি তার চেহারা নষ্ট হয়ে যায় পরবর্তীতে কিন্তু ওই মেয়ের জীবন হুমকির মুখে পড়বে ।
তার মানে আমরা বলতে পারছি ফ্যামিলির স্ট্যাটাসটা দেখতে হবে রূপ দেখা যাবে না, দেখলেও ফ্যামিলি স্ট্যাটাস ম্যাচ হইতে হবে ।
আরেকটা উদাহারন দেই যে পরিবার থেকে আপনার ছেলের জন্য মেয়ে দেখতে চাচ্ছেন ওই মেয়ের পরিবার টা আপনার পরিবারের মতোই স্ট্যাটাস সম্পন্ন হতে হবে ।আপনার যদি পাঁচতলা বাড়ি থাকে ওই মেয়ের বাড়ি থাকতে হবে এটা হচ্ছে ম্যান্ডেটরি। আবার আপনাদের পরিবারের থেকে ছেলে আরো উচ্চ বংশ এক্ষেত্রে প্রবলেমটা হবে পরবর্তীতে আপনার মেয়ের কোন একটা কারণে চেহারা নষ্ট হয়ে গেল তখন ।
পরবর্তীতে ওই শশুড়বাড়ির পরিবার থেকে আপনার মেয়ের প্রতি যৌতুকের জন্য প্রেসার সৃষ্টি করবে কারণ তারা মেইনলি আপনার মেয়েকে এনেছিল সৌন্দর্যের জন্য ।
ছেলে মেয়ে বিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে ফ্যামিলি স্ট্যাটাস ম্যাচ করতে হবে ।
১০০% ম্যাচ করা পসিবল হবে না যতটুকু সম্ভব ততটুকু ম্যাচ করতে হবে ।
আর এই রকমই মনে করা যাবে না কেউ অনেক হাই-ফাই ভাবে চললেই তার অনেক টাকা আছে ! ব্যাপারটা তেমন নাও হতে পারে । এজন্য আপনার অবশ্যই তার ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করে নিতে হবে।
ফ্যামিলি স্ট্যাটাস বলতে ফ্যামিলিতে মোটামুটি কি রকম সম্পদ আছে আর আপনাদের কিরকম সম্পদ আছে ।
তিন নম্বর. কারনটা হচ্ছে ফ্যামিলি ইনভাইরোনমেন্ট
এটিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে ।
এক. হচ্ছে আত্মীয় স্বজন
দুই. হচ্ছে প্রতিবেশি।
এক. এর ব্যাখ্যা
তার মানে অবশ্যই বিয়ের আগে যে জিনিসটা দেখবেন সেটি হচ্ছে মেয়ের আত্মীয়-স্বজন এবং ছেলের আত্মীয়-স্বজনের কোয়ালিটি । এখানে কোয়ালিটি সেম বলতে অলমোস্ট যেন একই থাকে ।
একদম একই হওয়া কখনোই পসিবল না। ধরুন আপনার ছেলেকে বিয়ে দিয়েছেন একটা গরিব পরিবারের মেয়ের সঙ্গে । তার আত্মীয়স্বজন গরিব , আপনার পরিবারের আত্মীয়-স্বজন হচ্ছে বড়লোক | সে ক্ষেত্রে ছেলের পরিবার আত্মীয়স্বজন কিন্তু মেয়ের পরিবারের আত্মীয়-স্বজনের সাথে বিয়ের পরে তেমন একটা দেখা সাক্ষাতের জন্য যাবে না ।
যখনই দেখা সাক্ষাৎ একটা পরিবারের মানুষ অন্য পরিবারের যাওয়া কমে যাবে তখন বুঝতে হবে সেটা ডিভোর্সের দিকে যাচ্ছে ভবিষ্যতে । ছেলের পরিবারের আত্মীয়-স্বজন আর মেয়ের পরিবার আত্মীয়-স্বজন দুজনের ফাইনান্সিয়াল অর্থনৈতিক অবস্থা অনেকটা ম্যাচে থাকতে হবে ।
দুই. এর ব্যাখ্যা:
ধরুন ছেলের প্রতিবেশিরা মোটামুটি ভালো মানের চাকরি-বাকরি করেন এবং মোটামুটি ধার্মিক কিন্তু মেয়ের পরিবারের বাসা যেখানে, সেখানে আশেপাশে যারা থাকে প্রতিবেশী ,
তাদের বেশিরভাগই হচ্ছে মূর্খ, তারা মাদকের ব্যবসা করে, তারা একেক সময় মানুষদের সাথে ঝগড়া লাগলে গালি দেয়।
ব্যাপারটা হচ্ছে এই ধরনের পরিবারে যদি আপনি আপনার ছেলেকে বিয়ে দেন ওই ফ্যামিলির কোন একটা আশেপাশের পরিবেশের মেয়ের সঙ্গে তাহলে পরবর্তীতে ছেলের আত্মীয়-স্বজন কিন্তু মেয়ের বাড়িতে কখনো কিন্তু ভিজিট করার জন্য যাবেনা ।
এই যাওয়া টা যখন বন্ধ হবে যখন তখন কিন্তু আস্তে আস্তে সেটা ডিভোর্সের দিকে চলে যাবে । এজন্য আপনারা অবশ্যই খেয়াল করবেন ।
আমি বলছি না যে আপনাদের ১০০ পারসেন্ট ম্যাচ করতে হবে । আর আমি এটাও বলছি না যে আপনাদের যদি ইনভারমেন্ট ম্যাচ না হয় তাহলে ডিভোর্স হয়ে যাবে। যদি একটু ম্যাচ রাখতে পারেন তাহলে আমার মনে হয় আপনারা ডিভোর্স থেকে বেঁচে যাবেন বা ডিভোর্সের হার নিচের দিকে থাকবে।
৪ নাম্বার. কারণটা হচ্ছে দুইজনের ধর্মীয় জ্ঞান সমান না থাকলে
ধরুন আপনি মুসলিম আর আপনি আপনার মেয়ের জন্য একটা পাত্র খুঁজছেন এমন একজন, যে কিনা অনেক ধার্মিক কিন্তু আপনার মেয়েটা মোটেও ধার্মিক না আর মেয়েটা এক ওয়াক্ত নামাজ পড়ে না । আপনার মেয়েটা কুরআন পড়তে পারে না, আপনার মেয়েটা বেপর্দা হয়ে ঘোরাফেরা করে।
সেই ক্ষেত্রে আপনার একটা জিনিস চিন্তা করেন আপনার মেয়ে যখন ভালো একটা পাত্রর কাছে যাবে ,
তখন পাত্র চাবে আমার স্ত্রী একটু ভালোভাবে থাকুক পর্দাশীল হয়ে , নামাজ পড়ুক।
ছোটবেলা থেকে নামায-রোজার অভ্যাস না থাকলে হঠাৎ করে অভ্যাস করাটাও সহজ কাজ নয়।
আপনার মেয়ে বা ছেলে বিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে হাজবেন্ড এবং ওয়াইফের ধর্মীয় জ্ঞান দুইজনেরই থাকতে হবে আর দুইজনের মধ্যে যদি একজনের ধর্মীয় জ্ঞান না থাকে তাহলে এমন একজনকে পছন্দ করতে হবে যারও ধর্মীয় জ্ঞান নেই।
ওই মেয়েটার কথাই বলি যে মেয়েটা নামাজ পড়ে না, কোরান পড়তে পারে না তার জন্য এমন একজন পাত্র সিলেক্ট করা দরকার যে নামাজ পড়তে পারে না এবং কোরান পড়তে পারে না ।
তার মানে এই জিনিসগুলো যখন ম্যাচ হবে তখনই কিন্তু তাদের মধ্যে একটা বন্ডিং সৃষ্টি হবে।
আপনার মেয়ে যদি এমন একটি পাত্র খুঁজছে যে কিনা মাদকে আসক্ত না এই ধরনের পাত্র খোঁজার ক্ষেত্রে আপনাদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে এ ধরনের পাত্র পাওয়া কঠিন একটা চ্যালেঞ্জিং একটা ব্যাপার,
আপনারা হুজুরদের কাছে মেয়েদের বিয়ে দিতে চান না কারণ হুজুরদের হয়তো মাসিক ইনকাম কম । কিন্তু আপনারা যদি মাদকে আসক্ত নয় এরকম ছেলে খুঁজেন তাহলে আমি মনে করি হুজুরের সাথে আপনার মেয়ের বিয়ে দেওয়া উচিত।
পাঁচ নাম্বার. কারণ সেটি হচ্ছে dowry বা যৌতুক
যখনই দেখা যায় যৌতুকের জন্য প্রেসার ক্রিয়েট করা হয় তখনই সে পরিবারের আর বেশিদিন একসাথে থাকা হয়না । ওই পরিবার ডিভোর্সের দিকে চলে যায়।
এক আর্টিকেলে সব কারণ বলা যাবে না পরিবারের ভাঙ্গন নিয়ে। আমার ইচ্ছা আছে দুই থেকে তিনটা পর্বে আর্টিকেল লিখব। সংখ্যা আরো বাড়তে পারে ,আর আপনাদের যদি লিখাটি অবশ্যই মন থেকে ভালো লেগে থাকে ব্লগটি শেয়ার করে রাখুন। আর বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজন ও মেম্বারদের আপনি এই আর্টিকেলের কথা জানিয়ে দিন।
বাংলাদেশের যে পরিমাণে পরিবারের ভাঙ্গন হচ্ছে এটা যদি কমাতে না পারি , সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ কিন্তু একদিন আমেরিকার মত হয়ে যাবে। আমরা কেউই চাইনা বাংলাদেশ আমেরিকার মতো হয়ে যাক। সেই চিন্তা থেকে আমি চেষ্টা করলাম । পরবর্তী পর্বে আমি বাকি কারণগুলো বলব ডিভোর্সের।
আর আমি বিশ্বাস করি যে আমি আমার লিখার মাধ্যমে একটা পরিবারকে যদি ডিভোর্স থেকে রক্ষা করতে পারি , সে ক্ষেত্রে এই পরিবারকে যে আমি রক্ষা করতে পারলাম , এই জিনিসটা আমার কাছে শান্তি এবং এই জিনিসটার মাধ্যমে আমি আপনাদের কাছে বেঁচে থাকতে চাই লাভ গুরু হিসেবে । সেজন্য আমার জন্য দোয়া করবেন সবাই।
এই ব্লগে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হবে । সামাজিক সমস্যাগুলোর কারণ কি, সামাজিক সমস্যা গুলোর জন্য দায়ী কে এবং সামাজিক সমস্যাগুলোর সমাধানে কি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে…
Unique Content
Very Helpful Content